কউকের নির্লিপ্ততায় কলাতলীর কটেজ জোনে অবৈধ ভবন নির্মাণের হিড়িক

শাহীন মাহমুদ রাসেল::

কক্সবাজার শহরের পর্যটন কেন্দ্র কলাতলীর কটেজ জোনে ইমারত নির্মাণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অসংখ্য বহুতল ভবন। সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতাকে সুযোগ হিসেবে পুঁজি করে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও দায় এড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে কর্তা ব্যাক্তিরাও। অভিযোগ রয়েছে- মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে কোনো কোনো কর্মকর্তা এসব অবৈধ ভবন নির্মাণে সহায়তা করে যাচ্ছেন। তবে এসব ভবন মালিকদের দাবি, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) সঙ্গে কথাবার্তা বলেই তারা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়াও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে ও লাইট হাউস এলাকা ঘুরলে মনে হবে, নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। এসব ভবন নির্মাণকারী অনেকেই এতটাই অপ্রতিরোধ্য; তারা নির্মাণ সংক্রান্ত নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাই করছেন না। নেওয়া হচ্ছে না কউক বা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমোদন। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত আবাসিক হোটেল এবং বাণিজ্যিক ভবণ। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল (অব.) ফোরকান নিজেও স্বীকার করেছেন অবৈধ ভবন নির্মাণকারীদের ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠার বিষয়টি।

নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মিত অর্ধ শতাধিক ভবন চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষ, যার অধিকাংশ ভবন নির্মিত হয়েছে অনুমোদন ছাড়াই। এসব অবৈধ অনেক ভবনের নির্মাণকাজ এখনও চলমান। এগুলোতে অভিযান চালিয়ে কাউক বা জেলাপ্রশাসন মাঝেমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিলেও পরক্ষণে কাজ শুরু হয়। সেখানের অসংখ্য ভবন রয়েছে, যেগুলোতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নেই। কারণ তাদের অনুমোদন ছাড়াই ভবনগুলো নির্মিত হয়েছে। এতে পুরো কটেজজোন রয়েছে এক রকম অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কলাতলীর জিয়া গেষ্ট হাউসের গলির বিপরীত গলিতে একাধিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তন্মধ্যে হেলাল কটেজ নামে একটি আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলা নির্মাণ করা হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ভাবে। নিয়ম অনুসারে এখানে এক তলার বেশি করার অনুমোদন নেই। তবুও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পর্যন্ত নির্মাণে সেখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে হোটেল হোটেল কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরণের বাধা বিপত্তি ছাড়াই এমন বেপরোয়া ভাবে স্থাপনা নির্মাণে কর্তৃপক্ষের খুটির জোর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে প্রতিবেদক।

অনুসন্ধান করে জানা যায়- কটেজটির মালিক সংশ্লিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। আর কাজটির সমন্বয় করেছে কটেজ জোনের চিহ্নিত দালাল আবুল।

আবুল সম্পর্কে জানা যায়- সে হোটেল মোটেল জোনে কটেজ মালিকদের কাছে স্থাপনা নির্মাণের কাজে দালাল হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে আবুল দালাল এখানে কটেজ নির্মাণে ইচ্ছুক মালিকদের স্থাপনা নির্মাণ করে দিয়ে থাকেন।

এদিকে অবৈধ প্রক্রিয়া কটেজ স্থাপনা নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে ওই কটেজটির মালিক হেলাল প্রথমে কটেজটি তার নয় বলে দাবী করেন। পরবর্তীতে কিছু তথ্য প্রমাণ দিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হলে স্বীকার করেন হোটেলটি তার নামে হলেও মালিকানায় মূলত তার ভাই। তবে স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্ব আবুলে বলে জানান। আবুলই দায়িত্ব নিয়ে এই এলাকায় সমস্ত হোটেল কটেজ নির্মাণ করে দেন বলে দাবী করেন।

কলাতলীর কটেজ জোনে সরকারী বিধি লঙ্ঘন করে কীভাবে একের পর এক হোটেল কটেজ গড়ে উঠছে জানতে চাইলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ জানান- আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কোথাও কাজ থেমে নেই। তবুও দুস্কৃতিকারী অনেকেই আছে যারা আমাদের তৎপরতা ও পরিস্থিতি বুঝে এসব অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ এসব ভবন নির্মাণ রোধে তিনি প্রতিবেদকের তথ্য সহায়তাও চান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.