# কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজে অনিয়ম
# ছাত্রলীগের দাপট ছিল
# সাবেক হুইপকে দিতে হতো কমিশন
# দূর্নীতির কারণে কয়েকজনের সাময়িক বহিস্কার
মোঃ নেজাম উদ্দিন,কক্সবাজারঃ
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেন এক দূর্নীতির মহা কারখানায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ঘুষ ও বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে বেশ কয়েকটি উপজেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাময়িক বহিস্কার ও বদলী হয়েছে তার পরেও বর্তমানে কর্মরত কিছু উপজেলার কর্মকর্তার টাকার লোভের কারণে যেকোন ধরণের অনিয়ম করতে রাজি এমনটাই নজরে আসছে। বর্তমানে সাইফুল ইসলাম কক্সবাজার সদর ও ঈদগাও উপজেলার উপহকারী প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত আছেন । তিনি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত থাকায় কক্সবাজারে আসার পর থেকে কক্সবাজার সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের আস্থাভাজন হয়ে কাজ করে বলে জানা গেছে। পরে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনর সাথে হাত করে সদর উপজেলার প্রায় কাজ ছাত্রলীগ নেতাদেরদিয়ে করিয়ে তিনি সুবিধা নিতেন আথিৃকভাবে এমনটা খবর রয়েছে । এদিকে কাজের কমিশন পৌছাতে হতো সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের কাছেও । সম্প্রতি বিভিন্ন কাজের অনিয়ম নিয়ে জেলা অফিস বরাবর অভিযোগ দিয়েছে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। অন্যদিকে এসব অনিয়মের বিরোধিতা করার কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সুপারভিশন কনসালটেন্ট মোঃ ফরিদ হাসানকে অন্যায়ভাবে চাকরীচূত করার অভিযোগ করেছেন চাকরি হারা ফরিদ নিজেই ।
এদিকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশবøক নির্মাণে মেসার্স এম. রহমান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারের প্রতিনিধি মিজানের টেকনাফ উপজেলায় প্রাইমারী স্কুলে ওয়াশ বøক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে । সাবেক সরকারের আমলে তিনি প্রভাব খাটিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা অফিসের সাবেক এস্টিমেটর রাজিব হোসেন (রাজু)পিডিপি ৪( চঊউচ৪) এর মাধ্যমে কাজগুলো নিজের ঠিকাদারী প্রতিষ্টানে বাগিয়ে নেয় অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই রাজিুবল হোসেনের বিরোদ্ধে সব অভিযোগ দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক তদন্ত করছে বলে জানা গেছে ।
অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, মিজান, কক্সবাজার সদর-৩ আসনের সাবেক এম পি ও সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন, সাদ্দামের ঘনিষ্টসহচর আসেম সহ আরো অনেকে বিশাল একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাব ঠিকাদারীতে কাজ করত। এস্টিমেটর রাজু টেন্ডারের গোপন রেইট ফাস করে ছাত্রলীগ ও তার মনোনীত ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে কাজ দিত। যার কারণে সাবেক সরকারের পতনের পরে জেলা সদর কক্সবাজার থেকে ঢাকাতে দ্রæত ট্রান্সফার নিয়ে চলে যায়। তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান । উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জেলা অফিসে জমা পড়েছে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান। ০৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরুধী ছাত্র আন্দোলনের পরে কক্সবাজার সদর-৩ আসনের সাবেক এম পি ও সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন, সাদ্দামের ঘনিষ্টসহচর আসেম সহ আরো অনেকে পলাতক রয়েছে । ঠিকাদার মিজানের প্রভাব জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কক্সবাজার অফিসে বর্তমানেও রয়েছে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি তদন্তে দেখা গেছে, মিজান বিভিন্ন উপজেলাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে। এগুলোর প্রতিবাদ করার কারনে পিইডি৪ (চঊউচ৪) প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত সুপারভিশন কনসালটেন্ট মোঃ ফরিদ হাসানকে অন্যায়ভাবে চাকরীচূত করার অভিযোগ উঠে। রাজু,আসেম, মিজানের অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণে সাবেক সরকারের আমলে জেলা অফিসের স্বমন্বয় মিটিংয়ে ছাত্রলীগের আসেম সুপারভিশন কনসালটেন্ট মোঃ ফরিদ হাসানকে হুমকি প্রদান করে যে, ‘আমার সাইডে গেলে তোর হাত পা ভেঙ্গে দিব’। কিছুদিন পরে তার কাজের অনিয়মের জন্য ঈদগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান সাময়িক বহিস্কার হলেও ছাত্রলীগ আসেমের বিরুদ্ধে অদৃশ্য কারণে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের আসেম ও মিজান, এস্টিমেটর রাজুর মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মে ২০২৪ সালে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে সুপারভিশন কনসালটেন্ট মোঃ ফরিদ হাসানকে শোকজ করান। সম্প্রতি টেকনাফ উপজেলাতে ঠিকাদার মিজান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে। অনিয়মকৃত স্কুল গুলো হলোঃ দক্ষিণ শীলখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কচ্ছপিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,জাহাজপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার অনিয়মের কারণে ছাত্র সমন্বয়কদের বাঁধার মুখে দক্ষিণ শীলখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশবøক নির্মাণ না করে রড কেটে নিয়ে চলে যায় ঠিকাদার মিজান। তিনি এই সমস্ত স্কুলের ওয়াশবøক কাজে ১০ মি.মি. রড ব্যবহার করার কথা থাকলেও ৮ মি.মি. রড ব্যবহার করে কলামে এবং ছাদে। কলামে ৮ টি রড দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কলাম ডালাই দেওয়ার পূর্বে ২টি রড কেটে ৬টি দিয়ে ডালাই দিয়ে দেন দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনি নি¤œ মানের মালামাল ব্যবহার করে কাজ করেন। পিলার ও গ্রেডবিমে কম সিমেন্ট ব্যবহার ও পর্যাপ্ত পানি দিয়ে কিউরিং না করার ফলে কাজ অত্যন্ত নি¤œ মানের হয়েছে যা কিছুদিন পরে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব অনিয়ম দেখে মোঃ ফরিদ হাসান উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ফারুক হোসেনকে ফোনে অবগত করে যার কারণে উপজেলা প্রকৌশলী কাজ বন্ধ করে দেন এবং ঠিকাদারকে ড্রয়িং ও ডিজাইন মোতাবেক কাজ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে করে বলে জানা যায়। দুইদিন পরে কনসালটেন্ট এর কথা কর্ণপাত না করে উপজেলা অফিসকে চাপ দিয়ে কচ্ছপিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জাহাজপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর ছাদ ঢালাই সম্পূর্ণ করে এবং দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কলাম ঢালাই সম্পূর্ণ করে বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ফরিদ হাসানকে বিনা নোটিশে একদিনের মধ্যে চাকরীচূত করার অভিযোগ উঠেছে। সচেতন মহলের দাবী এই সমস্থ দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে এখনি ব্যবস্থা না নিলে তারা অপরাধের সা¤্রাজ্য গড়ে তুলবে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিচিভ করেননি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.