এবার দিনমজুরকে পেটালো পুলিশ
ইয়ানুর রহমান : কোনো কারণ ছাড়াই এবার দিনমুজুরকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদালপুর ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। আহত ওই দিনমজুর বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ঝিনাইদহের
কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদালপুর রেল স্টেশনের পার্শ্ববর্তী স্থানে।
এলাকাবাসী জানান, ওই রেল স্টেশন পাড়ার মৃত বিলায়েত আলীর ছেলে আব্দুল মালেক (৪৫) দিনমুজুরের কাজ করেন। পাশাপাশি রেল লাইনের পাশে বিচালী বেচাকেনা করেন। রাতে বিচালী চুরি হয়ে যাওয়ায় তিনি ওখানেই রাতযাপন করেন।
যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল মালেক জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ দুইজন টর্চ লাইটের আলো তার চোখে ধরলে অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় তাদের পরিচয় জানতে চান। এ সময় সিভিল পোশাকে থাকা ফাঁড়ির এএসআই ইমতিয়াজ ও কনস্টোবল সামিনুল ইসলাম উত্তর দেন- ‘তোর বাপ আমরা’। আ. মালেক চোর মনে করে উত্তর দিলে সাথে সাথে নেমে আসে তার ওপর নির্যাতনের খড়গ। তাকে ধরে ওই পুলিশ সদস্যারা বেধড়ক মারপিট করে। মালেকের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজনসহ তার মেয়ে নিলুফা (২২) ও স্ত্রী পারুল (৪০) ছুটে আসেন। তাদের সামনেও পেটাতে থাকে পুলিশ সদস্যরা।
আ. মালেকের কাছে হাসপাতালে থাকা মেয়ে নিলুফা বলেন, ‘মারধর করার কারণ জানতে চাইলে, ওই পুলিশরা আমাকে ও মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে বাবাকে ওখানে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় পুলিশ। বড় চাচা আব্দুল হাই কয়েকজন প্রতিবেশীকে সাথে নিয়ে বাবাকে কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালে নেন।
অবস্থা খারাপ হওয়ায় ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রেফার্ড করে দেন’।
তিনি আরও বলেন- ‘বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করার মত সঙ্গতি না থাকায় বাবাকে তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে গ্রাম থেকে টাকা তুলে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমার চোখের সামনে পিতার ওপর অমানষিক নির্যাতন করেছে ওরা। ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’। কথা বলতে বলতে অঝরে কাঁদতে থাকেন
নিলুফা।
এ ব্যাপারে সাফদালপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা কায়দার রহমান বলেন, ওই পুলিশের এতটা বাড়াবাড়ি ঠিক হয়নি। কোনো কারণ ছাড়াই সাধারণ মানুষের ওপর জুলুমের বিচার হওয়া উচিৎ।
কোটচাঁদপুর থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ডিউটিরত অবস্থায় একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটি ঘটেছে। এছাড়া মালেকের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিলো।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের চিকিৎসক বণি আমিন বলেন, রোগীর আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল ঠিকই। তবে রোগীর শরীরের বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হয়তোবা মারধরের কারণে রোগীর এমন সমস্যাটি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। বাকিটা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে বলে
তিনি জানান।
যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ জানান, আব্দুল মালেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত এএসআই ইমতিয়াজের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ও বন্ধ রাখায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.