এনআইডি’র অনিয়মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে অভিযোগ, মাঠপর্যায়ে কড়া বার্তা

ওয়ান নিউজ ডেক্স: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবায় অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অভিযোগ দেওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি মাঠপর্যায়ে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে। এতে কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা অন্য কারও বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবায় অনিয়ম, দুর্নীতি, সেবা প্রার্থীকে হয়রানি বা সেবা প্রদানে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ইত্যাদি প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইসির মাঠপর্যায়ের সকল আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র নতুন ইস্যু/সংশোধন/স্থানান্তর ইত্যাদি কাজে সেবা প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, দালাল চক্রের সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশিত হয়েছে। যথাযথ প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও সেবাপ্রার্থীদের সেবা না দিয়ে নানা ধরনের কৌশল নেওয়া হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, নানা অনিয়ম, ছল-চাতুরি, অন্যের নাম ভাঙানো ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে।

চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই প্রকল্পের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরা হয়েছে এবং তা সমাধানের জন্য সুপারিশও করা হয়েছে।

ওই আলোকে ইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইসি ১০ কোটি ১৮ লাখ ভোটারকে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দিয়ে আসছে। স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত দুরূহ হলেও এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে যাচ্ছেন। এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেওয়া ইসির অন্যতম বিশাল অর্জন, যা দেশে-বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। তাই যেকোনো মূল্যে এনআইডির সঠিকতা ও শুদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, দালালের জন্য ভেস্তে দেওয়া যায় না, দেওয়া হবে না। তাই দুর্নীতি, হয়রানি এবং সকল অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ইসি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত এবং সততা, নিষ্ঠা ও দ্রুততার সঙ্গে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ করা হয়।

অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ করার জন্য নতুন এনআইডি ইস্যু/সংশোধন/হালনাগাদকরণে আবেদনকারীর ভোগান্তি/হয়রানি বন্ধে ১৮টি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিশ্চিত করা এবং জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে এনআইডির মহাপরিচালক বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনও এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এনআইডি উইংয়ের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যদি কেউ জড়িত হন। সেই ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ শাস্তির (৫ বছরের জেল) বিধান আছে। সেই সর্বোচ্চ শাস্তি দিতেও আমরা বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করব না।’

এনআইডির মহাপরিচালক জানান, বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কারণে ইতোমধ্যে চারজনকে মামলা দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। অনিয়ম পেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘টাকা দেওয়া ও নেওয়া দু’টিই অপরাধ। সুতরাং সমস্যা হলে আমাদের হেল্পলাইনে (১০৫) বিনা পয়সায় ফোন করে সহায়তা নিবেন। আমরা সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। সেবার বিনিময়ে কেউ টাকা চাইলে জানাবেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইসি সূত্র জানায়, এর আগেও কমিশন কয়েক দফায় মাঠপর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে না ফেলানোর জন্য বলা হয়েছে।

২০০৮ সালে প্রথম ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের হাতে আধুনিক নানা সুবিধা সম্বলিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.