উৎকণ্ঠায় ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী

এসএসসি ও এইচএসসির কী হবে?

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ
প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা আগামী জুনে এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে নেওয়ার কথা রয়েছে। আবার সরকারের এমন চিন্তাও আছে যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে না। আবার করোনা কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে তা-ও কেউ বলতে পারছে না। অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রশ্ন, তাহলে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে, সরকারের চিন্তা কী?

গতবছরের এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হলেও এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবার ১৫ দিন আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, স্থগিত করা হয় পরীক্ষা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অপেক্ষায় কেটে যায় মাসের পর মাস। শেষ পর্যন্ত কোনো ধরণের পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ ফল পায় শিক্ষার্থীরা। চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ৪০ লাখ পরীক্ষার্থী এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। এসব শিক্ষার্থী এবং এদের অভিভাবক মিলিয়ে কোটি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কী হবে এই পরীক্ষার?

আজিজুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, গতবছরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল কোনোভাবেই অটোপাস দেওয়া হবে না। পরীক্ষা নেওয়া হবে। করোনার মধ্যেও কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল কেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো হবে। জেড আকৃতিতে শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসবে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিন্তু অটোপাসই দেওয়া হয়েছিল। এবারও কী সেটা হবে?

তথ্য অনুযায়ী, গতবছর যথাসময়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবার যারা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের তো গত এক বছরে কোনো পাঠদানই হয়নি। স্কুল-কলেজের ছায়া পর্যন্ত দেখেনি। অভিভাবক ও শিক্ষকদের বক্তব্য, যদি কোনো ধরনের পাঠদান ছাড়া পরীক্ষা হয় তাহলে পরীক্ষার খাতায় এরা কী লিখবে? আবার যদি এদের বিষয়ে অটোপাসের চিন্তা করা হয় তাহলে কিসের ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়া হবে?

গতবছর যাদের এইচএসসিতে অটোপাস দেওয়া হয়েছিল তারা এর আগে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা থেকে ২৫ ও ৭৫ শতাংশ নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। এবারে যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী তারা তো শুধু জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জেএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতেই কি অটোপাস হবে, কী ভাবছে সরকার ?
তবে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষার বিকল্প এখনো কিছু ভাবা হচ্ছে না। বোর্ডগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। শিক্ষার্থীদের কিছুদিন হলেও ক্লাসরুমে নিতে চাইছে সরকার। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকার গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস হবে। এরপর পরীক্ষা নেওয়া হবে। আমরা অপেক্ষা করছি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আসা পর্যন্ত।
এবারের এসএসসি ও এইচএসসি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, গত ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে এবার বেড়ে যাওয়ায় এই ছুটি বাড়ানো হয় ২২ মে পর্যন্ত। ফলে ঐ পরিকল্পনা অনুযায়ীও জুন-জুলাইয়ে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।

আবার বিদ্যমান ছুটি ঘোষণা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী ২৩ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিনের সিলেবাস শেষ করতে সময় যাবে আগামী ২৩ জুলাই। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হলেও আগস্ট মাসে পরীক্ষা নিতে হবে। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে বোর্ডের সচিব ইত্তেফাককে বলেন, এ ক্ষেত্রে আরো দুই-এক মাস পিছিয়ে যেতে পারে।

আমিরুজ্জামান নামে এক অভিভাবক বলেন, যদি এ বছরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না যায়, যদি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস না হয় তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দুটির বিষয়ে সরকারের উচিত এর বিকল্প নিয়ে কাজ করা সেটা যাই হোক না কেন?

নজরুল আমিন নামে এক শিক্ষক বলেন, ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে নিয়ে সরকারের দ্রুত একাধিক পরিকল্পনা করা উচিত। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। শিক্ষকরাও বসে আছেন। তাই স্কুলের শিক্ষকদের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইন গ্রুপ করে মনিটরিং করা উচিত। যাতে যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হয়েছে তা সে অনুযায়ী বাসায় পড়াশোনা করে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.