উত্তপ্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

মোঃ নেজাম উদ্দিন,
পৃথিবীর সবচাইতে বড় শরনার্থী ক্যাম্প বাংলাদেশে কক্সবাজারে। জেলার উখিয়া ও টেকনাফে রয়েছে প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস। তারা তাদেও মতো করে  জীবন ধারণ করছে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় । সম্প্রতি তারা মায়ানমার ফিওর যেতে মহা সমাবেশের আয়োজন করে। তাতে লেটস্ গো হোম শ্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো রোহিঙ্গা এলাকা।
আজ পালিত হলো বিশ্ব শরনার্থী দিবস। তারপরে তাদের বাড়ি ফেরা হচ্ছেনা। দিন দিন তাদের অপেক্ষার দিন বড় হচ্ছে এমনটাই মনে করছে তদারা। ১৯৯২ সালে আসা রোহিঙ্গারা  কিছু চলে গেলেও অনেকেই ক্যাম্পে রয়েছে আবার ২০১৭ সালে আরো রোহিঙ্গা আসে বাংলাদেশে। কিন্তু তাও  গত ৫ বছরেও সমাধান হয়নি শরনার্থী সমস্যার। বছরের পর বছর বৈধ-অবৈধ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বহন করে চলেছে বাংলাদেশ। তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও থমকে আছে অনেকদিন ধরে। এতে দেশের ভেতরে বাড়ছে সংকট। রোহিঙ্গারা ইয়াবা-মানবপাচারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায়, তৈরি হচ্ছে সামাজিক সমস্যা। উখিয়া কুতুপালং আর টেকনাফের নয়াপাড়া এলাকায় শরণার্থী ক্যাম্প। যেখানে বাস করছে১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তবে এটা সরকারি হিসাব। এর বাইরে গোটা কক্সবাজার জেলায়কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে অবৈধভাবে। আছে বান্দরবান ও চট্টগ্রামেও। কেবল দেশের জন্যই নয়, স্থানীয়দের কাছেও এখন বড় এক বোঝার নাম রোহিঙ্গা। কারণ, এই শরণার্থীদের চাপে নানা সমস্যায় স্থানীয়রা। পাশাপাশি, তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধেও। এদিকে ১৯৯২ সালে আসা রোহিঙ্গারা কিছু অংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকলেও বাকিরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এমনকি তারা এখনকার জাতীয়তা ও নিয়ে ফেলেছে । মাঝে উদ্যোগ নিলেও তার কোন অগ্রগতি নেই ত্যাবাসনের । তবে, মিয়ানমারে নিরাপত্তা পেলে দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা। এবছর আবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুমারী করছে। যার একটি হিসাব দেশে কত রোহিঙ্গা আছে তার পরিসখ্যান প্রকাশ করা হবে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল। এর সমাধানে জরুরি, কার্যকর কুটনৈতিক প্রচেষ্টা। প্রথমে কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্ত হয়ে, রোহিঙ্গা ব্যাপকহারে বাংলাদেশ আসতে শুরু করে ১৯৯২ সাল থেকে। এরপর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আড়াইলাখের মতো শরণার্থী দেশে ফেরত পাঠানো হলেও বাকিদের নিতে গড়িমসি করছে, মিয়ানমার। তথ্য সুত্রে জানা গেছে, শরণার্থী রয়েছে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকা শরণার্থীদের ভারে জর্জরিত হয়ে আছে।
গত ১৯ জুন সকাল থেকে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফেরত যেতে মহা সমাবেশের আয়োজন করে ।
নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ‘গো হোম’ প্রচারণা করছে রোহিঙ্গারা। গতকাল উখিয়ার ৯, ১৪, ১৩, ১৭, ২ ওয়েস্ট, ১ ওয়েস্ট, ৪ ও ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে সকাল ৮টা থেকে এ প্রচারণা শুরু হয়। যেখানে উল্লিখিত ক্যাম্পগুলোর পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা অংশ নেন। এ ছাড়াও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে একযোগে শুরু হয় কর্মসূচি। অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। এ সময় নিজের দেশে ফিরিয়ে দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানায় রোহিঙ্গারা। ‘ব্যাক টু হোম’ স্লোগানে এই কর্মসূচিতে লাখো রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করছে। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ একই দাবিতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন। তবে, এবারের সমাবেশের একক কোনো আয়োজক কিংবা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ সামনে না এলেও প্রচারপত্রে আয়োজক হিসেবে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী লেখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আরাকানের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করা হয় এই কর্মসূচিতে। উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই এবং আমাদের আশা এবারের সমাবেশটির মাধ্যমে উত্থাপিত রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গুরুত্ব পাবে।
রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি কিন মং বলেন, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে আমাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই আমরা, সমাবেশে আমরা এই মূল দাবিটাই জানাচ্ছি বিশ্ববাসীর কাছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আমরা কৃতজ্ঞ।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানাচ্ছে। তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে হচ্ছে না তবে, এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ছাড়া রোহিঙ্গাদের বড় কোনো জমায়েত কিংবা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কামরান হোসাইন জানান, ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি হচ্ছে। ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৮ এপিবিএনের তৎপরতা সবসময় অব্যাহত আছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জঘন্য নৃশংসতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নির্যাতিত হয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে বিতাড়িত হয়েছিল যা ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে ভয়াবহ দেশত্যাগ হিসেবে বিবেচিত। নির্যাতিত রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট ১৯ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের মাঝে অস্থিরতার কারণে তারা বিািভন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা । জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি না থাকার কারনে বিগত সাগে চার বছরে প্রায় ২ লাখের উপরে শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণ করেবে।এদিকে প্রতিনিয়ত গুম,খুন,অপহরণ,গুলাগুলি বেড়ে চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানও চলছে। অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকও হচ্ছে। এই মাসে গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় উখিয়া থানা আটক করেছে প্রায় কয়েক শত এর উপরে রোহিঙ্গা। তাদের আটক করে আবারো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোঃ আলী জানান, আমরা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের পাগড়াও করে পুশব্যাক করছি ।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তারা বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে এমনটই প্রমাণ মিলছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ প্রবণতা কমাতে এবং খুব সহজে অপরাধীদের সনাক্ত করতে ক্যাম্পগুলোতে বøকে বøকে বা বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার দাবি তুলেছেন সচেতন মহল। অনেক সাংবাদিকরাও ফেসবুক পোস্টে এই দাবি তুলে ধরেছেন। ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গা ও আগে থেকে ছিল পুরানো রোহিঙ্গাদের সমন্নয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এখন স্থানীয়দের জন্য বিষপোড়া হয়ে দাড়িয়েছে। তারা কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্যে সংর্ঘষ হয়। আবার তারা তাদের চাহিদা মিটাতে গিয়ে টাকার প্রয়োজন হলেও অস্ত্র ঠেকিয়ে স্থানীয়দের অপহরণ করে আদায় করছে মোট অংকের টাকা ।
এদিকে হারাকা আল ইয়াকিন নামের রোহিঙ্গা সংগঠন অনেক সময় দিনে দুপুরে স্থানীয়দের বাড়িতে ডুকে যা পায় তা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এমন খবরও রয়েছে । আর তা আইনশৃংখা বাহিনীর কাছে বলতে গেলে হারাতে হবে প্রান । এমনভাবে ভয়ে দিন যাপন করছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বাসিন্দারা। কোন কারনে দিনে একটু শান্ত থাকলেও রাতের চিত্র ভিন্ন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশিদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজারের নির্জন পাহাড়ে। সেখানে হাত-পা ও চোখ বেঁধে চলে নির্মম নির্যাতন। গত বছরের ১৯ মে মাসে টেকনাফ থেকে কামরুল হাসান নামের এক সিএনজি চালককে অপহরণ করে আল-ইয়াকিনের সদস্যরা। তিনি বলেন, ‘আমাকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণ করা হয়। তারা আমার চোখ বেঁধে শালবন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে দিনে দু-তিনবার মারধর করা হতো, পরনের কাপড় খুলে নির্মমভাবে পেটানো হতো।’
‘আমাকে দিয়ে বাবাকে প্রতিদিন ফোন দিত তারা। মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। বাবাকে ফোন দিয়ে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে শব্দ শোনাত, যাতে তিনি ভয় পান। দ্রæত মুক্তিপণের টাকার ব্যবস্থা করেন। অপহরণের ১১ দিনের মাথায় পাঁচ লাখ টাকা দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। ক্যাম্পের কাছে আমার সামনেই তারা টাকাগুলো ভাগ করে নেয়।’
আল-ইয়াকিন বর্তমানে নারী সদস্য নিয়োগ দিচ্ছে। ক্যাম্পের নানা তথ্য তারা সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দেয়। এছাড়া স্থানীয় বিত্তশালীদের (বাংলাদেশি) বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে আল-ইয়াকিনের সুন্দরী নারী সদস্যরা। পরে তাদের ক্যাম্প থেকে অপহরণ করা হয় বলে সুত্র জানিয়েছে। এ কাজের জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার করে টাকা পায় তারা।
এভাবে অপহরণের শিকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে জানান, টেকনাফের শাল বাগান, শামলাপুর পাহাড়, জিমংখালি পাহাড়, পালংখালি, কুতুপালং ক্যাম্প ও মিনা বাজার সংলগ্ন নির্জন পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো তাদের। এসব পাহাড় অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশ নির্জন, বন্য হাতি চলাফেরা করে। এ কারণে ভয়ে ওদিকে কেউ যায় না।
এদিকে, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত গোলাগুলি হয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মাঝে।ওইদিন সকালে সমিরা আক্তার(৪১) নামের এক রোহিঙ্গা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি কুতুপালং ৩ নম্বর ক্যাম্পের এফ বøকের মৃত ছৈয়দ আলমের মেয়ে।
এরপর একই বছর ৪ অক্টোবর অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রæপের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ হলে দুই জন রোহিঙ্গা নিহত হন। তাছাড়া ওইদিন ভোরে কুতুপালং ক্যাম্পের ২ ওয়েষ্ট এর ডি ৫ বøকের মৃত সৈয়দ আলমের ছেলে ইমাম শরীফ (৩২) ও ডি ২ বøকের মৃত ইউনুসের ছেলে শামসুল আলম (৪৫) গোলাগুলিতে নিহত হন।
তারপর একই বছর ৫ অক্টোবর রাত ১১ টা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত আনাস ও মুন্না গ্রæপের মধ্যে আবার সংঘর্ষে জড়ায়। এতে মোহাম্মদ নাসিম (২৪) নামে রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত যুবক কুতুপালং ডি-৪, ২ ওয়েস্ট ক্যাম্পের মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে।
সর্বশেষ একই বছর ৬ অক্টোবর কুতুপালং ক্যাম্পে দু’গ্রæপের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। ওই ঘটনায় ৪ জন রোহিঙ্গার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে ।২০২০ সালে কক্সবাজার জেলাল টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে দশটি অস্ত্র উদ্ধার ও দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৯টি এসবিবিএল ও ১টি ওয়ান শুটার গান ছিল। মোট ১০ টি দেশীয় অস্ত্রসহ ২ রোহিঙ্গা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে আটক করেছিল তৎকালিন র‌্যাব । আটক আসামি টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত মৃত আমির হোসেনের পুত্র মো: সৈয়দ হোসেন এবং হ্নীলা মুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত আজিজুল হকের পুত্র বদি আলম।
অন্যদিকে রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন রূখতে চায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামের একটি সংগঠন। তারা মনে করছে বাংলাদেশ এখন তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল বিশে^র সাথে যোগাযোগ স্থাপনের । এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসে তারা আর্ন্তজাতিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। চীন মায়ানমার হয়ে আসছে মাদক ইয়াবা ,আইসসহ নিষিদ্ধ পণ্য।আর এইসব সুবিধা নিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে আস্তানা হিসাবে ব্যবহার করছে আরসাসহ বেশ কয়েকটি মিয়ানমার সংগঠন। মাদকের মাধ্যমে তারা তাদের হাতে আনছে ভারী অস্ত্র । এতে মিয়ানমারের হাত রয়েছে বলেও ধারনা করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দিনের বেলায় প্রশাসনের নজরদারিতে থাকলেও রাতের দৃশ্য অনেকটাই ভিন্ন। রাত হলেই সন্ত্রসীদের দৌড়াত্ব বেড়ে যায় । রাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা আতংকে থাকে বলেও জানা গেছে ।রাতের বেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সন্ত্রীদের দখলে থাকা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতোপূর্বে সংবাদও প্রচার হয়েছে।হত্যাকান্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলেও জানায় অনেকে।
বিশেষ করে মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনার পরে সব চেয়ে বেশি আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসীগ্রæপ গুলোর নাম।এই রোহিঙ্গাক্যাম্পগুলোতে ১৫-২০টা সন্ত্রাসীগ্রæপ রয়েছে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে আল ইয়াকিন-আরসা গ্রæপের নামই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ওঠে আসে। ওই সন্ত্রাসীগ্রæপগুলো যেকোনো ঘটনা ঘটিয়ে এক পক্ষ অন্যপক্ষের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে বলে জানা গেছে ।অপরাধ করে সহজে নিজেরা বেঁচে যেতে অন্যদের দোষারুপ করতে থাকে ।এইভাবে তারা একেঅপরের ঘাড়ের উপর দোষ চাপিয়ে অনেক অপরাধ করেও বেঁচে গেছে বলে জানায় সাধারাণ রোহিঙ্গারা।রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ করে যেকেউ সহজে যেনো অন্যের ঘাড়ের উপর দোষ চাপিয়ে পার পেয়ে না যায়,সহজেই যেনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সিসি ক্যামেরা খুবই জরুরি বলে জানান সুধী সমাজ ।

রোহিঙ্গা আলোচিত মুহিবুল্লাহর হত্যাকান্ডই নয়, এর আগেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন সময় সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে । পুলিশের এক সূত্রে জান যায় ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ ও উখিয়া থানায় অস্ত্র মামলা হয়েছিল ১৩টি। পরের বছর তা বেড়ে হয় ১৭টি ২০২০ সালে ২৭টি অস্ত্র মামলা হয়। চলতি বছরের নয় মাস ২৩ দিনে ১৫টি অস্ত্র মামলা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ১৪টি দেশীয় পিস্তল, ৪৪টি এলজি, তিনটি বিদেশি পিস্তল, ৩০টি একনলা বন্দুক, ২৫টি দেশি বন্দুক, চারটি পাইপগানসহ প্রচুর পরিমাণ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সময়ের মধ্যে ১২৩টি অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে ।তারপরেও কোনো ভাবেই থামছেই না তাদের অপরাধ !

এদিকে বছরে ৩৫ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে বাড়ছে অর্থাৎ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
গত ১০ এপ্রিল বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলবো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলবো- তারা যাতে সবাইকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করে। সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, প্রতি বছর তাদের সংখ্যা ৩৫ হাজার করে বেড়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। পাঁচ বছর হয়েছে, এতে দেড় লাখ কিন্তু অটোমেটিক বেড়ে গেছে। সেখানেও আমাদের একটি আশঙ্কার জায়গা। সেটা যাতে আমরা ট্যাকেল দিতে পারি, সেজন্য এসব ব্যবস্থার কথা আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) ডাটাবেজ ব্যবহার করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরও জোরদার করা হবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। যদি কোনো অভিযান প্রয়োজন হয় সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে। ‘উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেষ্টনী তৈরি করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি হয়েছে, রাস্তাা তৈরির কাজ প্রায় শেষ দিকে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন আছে আর রাস্তায় টহলরত, কোনো রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে। এটা আমরা জোরদার করছি। ‘আমরা যেটা অনুমান করছি, এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) মাদক স্টোর করা আছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।’

রোহিঙ্গারা আসার পর হাতের ছাপ নেওয়া হয়েছে, তারপরও তারা কীভাবে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যাদের চোখের ছাপ ও আঙুলের ছাপ আমরা নিয়েছি তারা কোনোক্রমেই পাসপোর্ট পাচ্ছে না। আগেও কিছু রোহিঙ্গা এখানে অবস্থান করতো। কিছু পালিয়েও এসেছে। ইউএনএইচএসসিআরের কাছে ডাটা আছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা এটা বন্ধ করবো।
‘ক্যাম্পের বাইরে যাতে আসতে না পারে, এজন্যই বেষ্টনী দিচ্ছি। কতজন বের হয়ে গেছে সেই তথ্য ইউএনএইচসিআর দিতে পারবে। তাদের কাছে আপডেট ডাটা আছে। আমরা তাদের রিকোয়েস্ট করবো। বেষ্টনী আর ২০ ভাগ যেটা বাকি আছে, সেটা শেষ হলে আরও কঠোর হবো। অনুমতি ছাড়া কাউকেই আমরা বের হতে দেবো না।
ইদানীং ছিনতাই বেড়ে গেছে, এটা বাড়ার কারণ কী- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য ছিনতাই আগের তুলনায় কমেছে। ১০ বছর আগের কথা চিন্তা করে তুলনা করলে, এটা (ছিনতাই) এখন জিরো। কিন্তু মাঝে মাঝে কয়েকটি ঘটনার কারণে আপনারা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। আমার জানামতে, সবগুলোই ধরা পড়েছে। আমাদের পুলিশ অনেক অ্যাকটিভ। যারা ছিনতাই করুক পার পাবে না।’
তিনি বলেন, আজ দু’বছর, কোভিডে সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল। যখনই অর্থনৈতিক একটি চাপ পড়ে, তখনই এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটে। যেটা হচ্ছে খুব সামান্য, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এদিকে দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে বারবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।সেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকান্ড ও সহিংস আচরণে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সিসি ক্যামেরা খুবই জরুরি ।কাঁটাতারের বেড়ার সাথেও চতুর্থদিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো দরকার বলে জানান তিনি ।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী জানান,সিসি ক্যামেরা নিরাপত্তার জন্য সুবিধা হয়।পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে মোবাইল ব্যবহার ,ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ব্যবসা ,রোহিঙ্গারা যেন এনজিওতে চাকরি করতে না পারে,সে ব্যবস্থাও করতে হবে বলে দাবি করেন ।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.