ইসরাইলে ইসলামপন্থী দল নিয়ে সরকার গড়ছে বিরোধী জোট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরাইলে বেনজামিন নেতানিয়াহুর টানা ১২ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। বুধবার (২ জুন) ইসরাইলের বিরোধীদলগুলোর নতুন জোট সরকার গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। বুধবার রাতে ইয়াশ আটিড দলের নেতা ইয়ার ল্যাপিড এ ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট রিভেন রিভলিনকে সরকার গঠন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইসরাইলের রাজনীতিতে মধ্যপন্থী বলে পরিচিত রাজনীতিবিদ ইয়ার ল্যাপিড তার ঘোষণায় জানান, অন্তত আট দলের একটি জোট গঠন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিভেন রিভলিনের কাছে সরকার গঠনের আবেদনও জানানো হয়েছে।

এক বার্তায় ইয়ার ল্যাপিড বলেন, “প্রেসিডেন্টকে বলেছি, আমি আপনার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি যে, এই সরকার ইসরাইলের সকল নাগরিকের হয়ে কাজ করবে। যারা বিরোধী পক্ষ তাদেরও সম্মান করবে নতুন সরকার। আমাদের সরকার ইসরাইলের সকল স্তরের মানুষকে এক ছাতার নিচে আনতে যা কিছু প্রয়োজন তা করবে”।

জোট নেতা ইয়ার ল্যাপিড প্রেসিডেন্টকে আরও জানিয়েছেন, তার সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেট। তবে তার মেয়াদ হবে ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারের বাকি সময় প্রধানমন্ত্রীত্ব করবেন ইয়ার ল্যাপিড নিজে।

ইসরাইলের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এবার এমন একটি জোট গঠন হয়েছে যা কয়েক দিন আগেও অসম্ভব বলে মনে করা হতো। বুধবার মধ্যপন্থী দল ইয়াশ আটিড, কট্টর ডানপন্থী দল ইয়ামিনি এবং আরব ইসলামিস্ট দল রাআম একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই তিন দলই ইসরাইলের রাজনীতি বরাবর একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত।

বিশেষত ইয়াশ আটিড নেতা ইয়ার ল্যাপিড ও ইয়ামিনা দলের নেতা নাফতালি বেনেট দুই মেরুর রাজনীতিবিদ। তাদের একজন ইয়ার ল্যাপিড—মধ্যপন্থী হলেও তিনি কিছুটা বাম ঘরণার রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। অন্যজন নাফতালি বেনেট কট্টর ডানপন্থী। তবে এবার নেতানিয়াহুর সরকার পতনের লক্ষ্যে তারা একই মঞ্চে জোট গড়েছেন।

এই সমঝোতা চুক্তিতে শেষ সময়ে যোগ দেয় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের ইসলামপন্থী ইউনাইটেড আরব লিস্ট বা রাআম। উল্লেখ্য, ইসলামপন্থী এই দলটির হিব্রু নাম ‘রেশিমা আরাভি এমেউলেদেত’। ফলে দলটি সংক্ষেপে রাআম নামে পরিচিত। এই প্রথম ইসরাইলের কোনো ক্ষমতাকেন্দ্রীক জোটে ইসলামপন্থী দলটি যুক্ত হলো।

ইসরাইলের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে জানা যায়, মনসুর আব্বাসের বিরোধী জোটে যোগদান ঠেকাতে সপ্তাহজুড়ে একাধিক সংলাপ করেন বেনজামিন নেতানিয়াহু। তিনি মনসুর আব্বাসকে প্রতিশ্রুতি দেন, দক্ষিণাঞ্চলে ‘অবৈধ’ আরব ভবনগুলো থেকে জরিমানা আদায়ের আইনটি বাতিল করে দেওয়া হবে। তবে মনসুর আব্বাস নেতানিয়াহুর দেওয়া সুবিধাটি বিরোধী জোটের কাছে দাবি করেন। ইয়ার ল্যাপিড ও নাফতালি বেনেট নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট মনসুর আব্বাসের দাবি মেনে নেয়। ফলে বুধবার বিরোধী জোট গঠনে এক সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তিন নেতা।

এ সমঝোতা চুক্তির বাইরেও ইসরাইলের নিউ হোপ পার্টির সঙ্গে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন ইয়ার ল্যাপিড ও নাফতালি বেনেট। ওই চুক্তির আওতায় সরকার গঠন হলে ইসরাইলে গাজার ব্যবহার বৈধ করে দেওয়ার অঙ্গিকার করা হয়েছে। পাশাপাশি দলটিকে বিচার, শিক্ষা, গণপূর্ত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইসরাইলে গত ২৩ মার্চ সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গড়ার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। ফলে জোট গড়ে প্রয়োজনীয় আসন সংগ্রহের জন্য ৬ এপ্রিল পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে সময় দেন প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিন। ওই তারিখ পর্যন্ত সরকার গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইয়াশ আটিডের নেতা ইয়ার ল্যাপিডকে সরকার গঠন করতে ২ জুন পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়। ঠিক ২ জুন রাতে সরকার গঠন করতে পারবেন বলে প্রেসিডেন্টকে জানালেন ইয়ার ল্যাপিড।

ইসরাইলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গড়তে ৬১টি আসনের প্রয়োজন হয়। ইসরাইলের ইতিহাসে কোনো একক দল ওই সংখ্যায় পৌঁছাতে পারেনি। বরাবরই জোট গড়ে সরকার গঠন করতে হয় ইসরাইলে।

গত মার্চের নির্বাচনে লিকুদ পার্টি ৩০টি আসন লাভ করে। পরে সরকার গঠনের ডাক পেয়ে জোট সঙ্গীদের নিয়ে ৫২টি পর্যন্ত আসন সংগ্রহে সমর্থন হোন বেনজামিন নেতানিয়াহু। পরে ইয়ার ল্যাপিড সরকার গঠনের সুযোগ পেয়ে শুরুতেই ৫৬ জন পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন লাভ করেন। ম্যাজিক নম্বর ৬১তে পৌঁছাতে নেফতালি বেনেট ও মনসুর আব্বাসের দলের সমর্থন প্রয়োজন হয় ইয়ার ল্যাপিডের। ওই নির্বাচনে নেফতালি বেনেটের দল ইয়ামিনা ৭টি আসন পেয়েছিল। এছাড়া মনসুর আব্বাসের দল পায় ৪টি আসন।

উল্লেখ্য, ইসরাইলে বিরোধী জোটের সরকার গঠনের পর আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ওই আস্থা ভোটে প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রমাণ করতে হবে জোট সরকারকে। তবে আস্থা ভোটে সমর্থন প্রমাণে ব্যর্থ হলে, ইসরাইলের ফের সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। জেরুসালেম পোস্ট, টাইম অব ইসরাইলের খবর।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.