চট্টগ্রাম ব্যুরো:
সব কিছুর একটা সীমা আছে। সব ঘটনার আবার শেষও হয়। সবচেয়ে বড় কথা প্রচলিত আইনে সব অপরাধীদের আবার আত্মসুদ্ধি আর আত্মসমর্পণের সুযোগও রয়েছে। সে সুযোগে ভালো পথে ফেরার আশায় বিপদগ্রস্ত মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিলেন বলে জানা যায়।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে সাড়ে তিন লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৩০টি অবৈধ অস্ত্র সহ ১০২জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ি আত্মসমর্পণ করেছে।
এতে শতাধিক ইয়াবা কারবারীদের সাথে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরের সেই আলোচিত ভবন মালিক লেদা এলাকার মো. হোছন ও আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এর সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম ও চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তির তালিকা এবং কর্ণফুলী ইছানগরের আলোচিত একটি ভবন মালিকের আপন ছোট ভাই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘তার ভাই ভুল বুঝতে ফেরে নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকে ফুল নিয়ে ১০২ জনের সাথে আত্মসর্মপণ করেছে।’
গত ১২ জানুয়ারী মঙ্গলবার দুপুরে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন চরপাথরঘাটার ইছানগরে দুই ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’র দুটি ভবন চিহ্নিত করে এবং ভাড়াটেদের ফ্ল্যাটগুলো খালি করার নির্দেশনাও দেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। এর তিন দিন পরেই তাঁরা আত্মসর্মপণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্রে মতে, চিহ্নিত ভবন দুটির মালিক টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন (৪৫) ও একই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোছন (৪০)। জানা গেছে, ভবনের অপর মালিক ও আত্মসর্মপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা যায়, ১০২ জন ইয়াবাবাজ প্রত্যেকেই টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। আত্মসমর্পণকারী ব্যবসায়িদের আসামী করে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের প‚র্বক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হবে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, দু’টি বিষয়ে তারা ওয়াদাবদ্ধ হয়েছেন-একটি হলো, আত্মসমর্পণকৃত ইয়াবাবাজরা আর জীবনেও কোনভাবেই ইয়াবার সাথে জড়িত হবেনা, অপরটি হলো-ইয়াবার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনেতা গড়ে তোলা। কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন-দেশের প্রচলিত আইনেই আত্মসমর্পণকারী ইয়াবাবাজদের বিচার হবে। ইয়াবাবাজ ও তাদের স্বজনদের সম্পদ দুদক ও এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।
তথ্যমতে, ২৮ জন ইয়াবা গডফাদার সহ ১০২ জন আত্মসমর্পণকারীদেও মধ্যে ছিলেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই যথাক্রমে আবদু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান ও এমপির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু এবং সাহেদ কামাল। টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র দিদার মিয়া ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ, পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, নাজিরপাড়ার এনামুল হক মেম্বার, সাবরাংয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ ধানু মেম্বার, আলী খালির জামাল মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, সাবরাংয়ের সামশু মেম্বার, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, পশ্চিম লেদার বোরহান, সাবরাংয়ের নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ভুট্টোর ভাগিনা আফসার, হ্নীলার রমজান ও বড় হাবিবপাড়ার ছিদ্দিক, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই পুত্র আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, হ্নীলার পশ্চিম সিকদারপাড়ার ছৈয়দ আহমদ, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, পুরনো পল্লানপাড়ার শাহ আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়ার রশিদ আহমদ, ওয়ালিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আবদুলাহ, চৌধুরীপাড়ার মং সং থেইন প্রকাশ মমচি ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জুবাইর হোসেন, হ্নীলা প‚র্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, নাইটংপাড়ার মো. ইউনুস, সাবরাং আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আলম, উত্তরলম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিমমাঝি, রাজারছড়ার আবদুল কুদ্দুছ, জাহেলিয়াপাড়ার মো. সিরাজ, সাবরাংয়ের আবদুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মো. রফিক, নতুন পল্লানপাড়ার মো. সেলিম, নাইট্যংপাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, নাজিরপাড়ার মো. হেলাল, চৌধুরীপাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়াঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার মোহাম্মদ হাছন, দক্ষিণ নয়াপাড়ার ন‚র মোহাম্মদ, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, প‚র্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, উত্তর আলীখালীর শাহ আজম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, সাবরাং ডেইলপাড়ার মো. সাকের মিয়া, সাবরাংয়ের আলী আহমদ, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ, জাদিমুরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, রাজারছড়ার হোসেন আলী, সাবরাং নয়াপাড়ার মো. তৈয়ব, উত্তর জালিয়াপাড়ার নুরুল বশর মিজি, নাজিরপাড়ার জামাল হোসেন, মৌলভীপাড়ার মো. আলী ও এই এলাকার আবদুল গনি, জালিয়াপাড়ার মো. হাশেম, পুরনো পল্লানপাড়া ইসমাইল, নাইট্যাংপাড়ার আইয়ুব, সাবরাংয়ের হোসেন আহমদ, সাবরাংয়ের শওকত আলম, নাইট্যাংপাড়ার হাবিব, আলীখালীর হারুন, মাঠপাড়ার কামাল, সাবরাংয়ের রাসেল, ডেইলপাড়ার নুরুল আমিন, শীলবনিয়াপাড়ার আইয়ুব, জালিয়াপাড়ার আলম, লেদার হামিদ, মুন্ডর ডেইলয়ের মনজুর, লেদার রবিউল আলম, সাবরাংয়ের মৌলভী বশির, হ্নীলার মাহাবুব, বাজারপাড়ার মো. শাহ, লেদার ফরিদ আলম, লেদার মো. হোছন, জালিয়াপাড়ার নুরুল আলম, লেদার জহুর আলম, আবু তাহের, ফুলের ডেইলের আলী নেওয়াজ ও আবু তৈয়ব সহ প্রমূখ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.