ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পাকিস্তান

ওয়ান নিউজ ক্রীড়া ডেক্সঃ নিজের ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাওয়ায় ইনজামাম-উল-হক নিশ্চয় খুব হাসছেন। চওড়া হাসি হাসার কথা সরফরাজ আহমেদও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক ও অধিনায়ক দুজনেই বেশ বড় মুখ করে বলেছিলেন, তাদের লক্ষ্য ফাইনাল-শিরোপা! তখন তাদের সেই আশাবাদকে একটু বেমানানই ঠেকছিল। কারণ টুর্নামেন্টপূর্ব আলোচনায় সরফরাজের পাকিস্তানকে সেভাবে কেউ গণাতেই ধরেননি! গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে গো-হারা হারার পর তো পাকিস্তান শিবিরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কা বেজে উঠেছিল। ব্যবধানে সেই পাকিস্তানই জায়গা করে নিল ফাইনালে। গড়ল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম বারের মতো ফাইনালে উঠার ইতিহাস।

গ্রুপপর্বের পরের দুই ম্যাচে জিতে সরফরাজের দল বীরদর্পে জায়গা করে নেয় সেমি-ফাইনালে। বুধবার কার্ডিফের সেমি-ফাইনালে তো স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে পা রাখল ফাইনালে। ১২.৫ ওভার বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের জয়, উড়িয়ে দেওয়া না তো কী!

টুর্নামেন্টের টপ ফেভারিট ইংলিশরা যেন সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে ফেলে গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচেই। বুধবার সেমি-ফাইনালে ব্যাটিং-বোলিং কোনোটিতেই পাকিস্তানিদের কাছে পাত্তা পায়নি ইয়ন মরগানের দল। টস জিতে প্রথমে বোলিং নেওয়া পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে গুড়িয়ে দেয় মাত্র ২১১ রানেই। কার্ডিফের নিঁখাদ ব্যাটিং উইকেটে ২১২ রানের লক্ষ্যটা যে স্রেফ তুলি মেরেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো, পাকিস্তান প্রমাণ করেছে সেটাই। আজহার আলি ও ফখর জামান উদ্বোধনী জুটিতেই গড়ে ফেলেন ১১৮ রানের জুটি। সেটাও মাত্র ২১.১ ওভারে।

এই টুর্নামেন্টেই ওয়ানডে অভিষেক হওয়া ফখন জামান তুলে নেন টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। এক ছক্কা ও ৭ চারে ৫৮ বলে ৫৭ রান করে আউট হন আদিল রশিদের বলে। তিনি ফিরে যাওয়ার পর বাবর আজমকে নিয়েও ৫৫ রানের জুটি গড়েন আজহার। এই পথে তিনি ক্যারিয়ারের ১১তম এবং এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি করে এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। কিন্তু তাকে তা করতে দেননি জেক বল। আজহার আউট হয়েছেন এক ছক্কা ও ৫ চারে ১০০ বলে ৭৬ রান করে। সেঞ্চুরি না পেলেও আজহারের মনে তা নিয়ে আফসোস থাকার কথা নয়। সব হিসাব-নিকাশকে পাল্টে দিয়ে দল প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে, এর চেয়ে খুশির আর কী হতে পারে!

আজহার ফিরে যাওয়ার পর বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ মিলে জয়ের বাকি কাজটুকু সেরেছেন অনায়াসেই। বাবর আজম ৩৮ ও হাফিজ অপরাজিত থাকেন ৩১ রান করে। বেন স্টোকসকে চার মেরে হাফিজ জয় নিশ্চিত করতেই ক্যামেরার ফোকাস পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে। পাকিস্তানের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ মিকি আর্থার ঝড়ের গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে ঝাপ্টে ধরলেন অধিনায়ক সরফরাজকে। মুখে চওড়া হাসি। দ্রুতই ক্যামেরার ফোকাস ঘুরে মাঠে। হাফিজ এগিয়ে এসে আলিঙ্গনে বাঁধলেন সঙ্গী বাবরকে। মুখে বাঁধ ভাঙ্গা হাসি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনেক তারকাখচিত দল নিয়েও এর আগে যা করতে পারেনি পাকিস্তান, সরফরাজের এই তরুণ, অনভিজ্ঞ দল গড়ল সেই কীর্তিই। প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পা রাখা। হাফিজদের উদযাপন তো বাঁধভাঙা হবেই।

প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠার আশায় পাকিস্তান বুধবার মাঠে নামে বোলিংয়ে দু’দুটি পরিবর্তন এনে। চোটের কারণে ছিটকে পড়েন পেসার মোহাম্মদ আমির। তার জায়গায় পাকিস্তানের ২১৪তম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেক হয় বাঁহাতি পেসার রুম্মন রাইসের। ফাহিম আশরাফের পরিবর্তে দলে ফেরেন স্পিনার শাদাব খান। এই দুজনসহ পাকিস্তানের বোলাররা শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করেছেন। গ্রুপপর্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ২১১ রানে বেঁধে রাখাটা সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।

গত বছর দুয়েক ধরে সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরি করাটাকে ডাল-ভাত বানিয়ে ফেলেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা! কিন্তু কার্ডিফের সেমি-ফাইনালে সেই ইংল্যান্ডের ইনিংসে একটা হাফসেঞ্চুরিও নেই! সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন জো রুট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছেন জেসন রয়ের পরিবর্তে মাঠে নামা জনি বেয়ারস্টো।  এ ছাড়া অধিনায়ক ইয়ন মরগান ৩৪, বেন স্টোকস ৩৪ রান করেন। ইংল্যান্ডের পুরো ইনিংসে কোনো ছক্কা নেই। চার মাত্র ১৫টি। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ ওভারের বেশি খেলা হয়েছে, এমন ইনিংসে এটাই সর্বনিম্ন বাউন্ডারির রেকর্ড!

পাকিস্তানের সব বোলারই দারুণ বোলিং করেছেন। তবে উইকেট প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে হাসান আলি। তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। এই ৩ উইকেট নিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৪ ম্যাচে হাসান আলির উইকেট হলো টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১০টি। যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেই এক আসরে কোনো পাকিস্তানি বোলারের সর্বোচ্চ উইকেট। আগের সর্বোচ্চ ৮ উইকেট ছিল সাঈদ আজমলের। হাসানের আনন্দটা দ্বিগুণ হয়ে থাকবে ম্যাচসেরার পুরস্কারেও। জুনাইদ খান ও ডেব্যুট্যান্ট রুম্মন রাইস নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। শাদাব খান একটি। বাকি দুটি রান আউট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ইংল্যান্ড : ৪৯.৫ ওভারে ২১১ (বেয়ারস্টো ৪৩, হেলস ১৩, রুট ৪৬, মরগান ৩৩, বেন স্টোকস ৩৪, বাটলার ৪, মঈন আলি ১১, আদিল রশিদ ৭, প্লানকেট ৯, উড ৩, বল ২*; জুনাইদ ২/৪২, রুম্মন ২/৪৪, ইমাদ ওয়াসিম ০/১৬, শাদাব খান ১/৪০, হাসান আলি ৩/৩৫, হাফিজ ০/৩৩)।

পাকিস্তান : ৩৭.১ ওভারে ২১৫/২ (আজহার ৭৬, ফখর জামান ৫৭, বাবর আজম ৩৮*, হাফিজ ৩১*; উড ০/৩৭,  বল ১/৩৭, বেন স্টোকস ০/৩৮, প্লানকেট ০/৩৩, রশিদ ১/৫৪, মঈন আলি ০/১৫)।

ফল : পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : হাসান আলি (পাকিস্তান)

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.