আল্লাহর বন্ধু হওয়ার অন্যতম উপায়সমুহ…..

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ  এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে আল্লাহ বন্ধু হতে চায় না? আল্লাহ বন্ধু হওয়ার অর্থই হচ্ছে দুনিয়া ও পরকালে তার কোনো ভয় ও হতাশা থাকবে না। আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করেন-

‘সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই আর নেই কোনো হতাশা। যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন বা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করেন। তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুছ : আয়াত ৬২-৬৪)

তাহলে আল্লাহর বন্ধু হতে হলে কী করতে হবে? কোন কাজে বান্দাহ আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হবে। এ ব্যাপারে বান্দার করণীয়ই বা কী?

‘হ্যাঁ’, আল্লাহর বন্ধু হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থেকে গোনাহমুক্ত জীবন-যাপন করা। নিজেকে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে তৈরি করতে গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য তাওবাহ করার বিকল্প নেই। কেননা গোনাহ থেকে ফিরে থাকার মাধ্যমেই মানুষ মহান আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হয়। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তোমরা যদি গোনাহ না কর, তবে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের স্থলে আল্লাহ তাআলা অন্য এক জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গোনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে। আর আল্লাহও তাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা চান বান্দা সব সময় আল্লাহর কাছে তাদের গোনাহের জন্য তাওবাহ করুক, ক্ষমা প্রার্থনা করুক। আর তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনার কারণে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রতি খুশী হয়ে যান। ওই বান্দাকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন।

তাওবাহকারী ব্যক্তি মহান আল্লাহর একান্ত প্রিয়। বান্দা যখন গোনাহ বা অন্যায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তখনই আল্লাহ খুশি হয়ে বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তাওবাহকারীদের সম্পর্কে একাধিক আয়াতে তার খুশির কথা এভাবে জানিয়েছেন-

– ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবাহকারী এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)
– ‘তোমাদের মনে কী আছে, তা তোমাদের পালনকর্তা ভালোই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৫)

– ‘তারা তওবাকারী, ইবাদতকারী, শোকরগোজার, দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী, রুকু ও সেজদাকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। বস্তুত সুসংবাদ দাও ঈমানদারদের।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬০)

কুরআনুল কারিমের এ সব আয়াত তাওবাহকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ। যারা গোনাহ বা অন্যায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে তারাই মহান আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা সেসব বান্দা তাওবাহ কবুল করবেন বলেও এভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-

‘অতপর যে তওবাহ করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মায়েদাহ : আয়াত ৩৯)

আল্লাহর বন্ধু হতে বিশ্বনবির নসিহত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে তাওবাহ ও তাওবাহকারী সম্পর্কে ঘোষণা করেন-
‘আদম সন্তান সবাই অপরাধ করে। অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা তওবাহ করে।’ (তিরমিজি)

তাওবাহ এমন এক ইবাদত। যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হয়। আল্লাহর কাছে বান্দার সম্মান ও মর্যাদা বেড়ে যায়। তাওবাহর ফলে বান্দা গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করে। এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোনাহমুক্ত জীবনের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ বার তাওবাহ-ইসতেগফার করতেন।

মুমিন মুসলমানের উচিত, নিয়মিত তাওবাহ-ইসতেগফার অব্যাহত রাখা। গোনাহমুক্ত জীবন লাভে সচেষ্ট হওয়া। সুন্নাতের অনুসরণে প্রতিদিন ন্যূনতম ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া। আল্লাহর নির্দেশ মেনে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

মুমিন মুসলমানের জন্য নিয়মসহ কয়েকটি তাওবাহর বাক্য তুলে ধরা হলো-

– أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)

– رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।’

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

– أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’

অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’

নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

– সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’

নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

পরিশেষে আল্লাহর বন্ধু হতে মুমিনদের জন্য সুসংবাদ হলো-

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)

আল্লাহ তাআলা যার প্রতি ক্ষমাশীল ও করুণাময় হয়ে যান। দুনিয়া ও পরকালে তার কোনো ভয় নেই, নেই কোনো হতাশা। সে ব্যক্তিই মহান আল্লাহর বন্ধু ও অভিভাবক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে তার বন্ধু হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.