ডেইলি স্টার:
গুণগত মান নিশ্চিত করতে আমদানি করা বিটুমিনের মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
পরীক্ষাটি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) বা ইস্টার্ন রিফাইনারিতে করতে হবে।
এর আগে, চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের আগে আমদানি করা বিটুমিনের গুণগত মান পরীক্ষার কোনো শর্ত ছিল না। তবে, যে দেশ থেকে এগুলো আমদানি করা হতো, সেই দেশের পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখাতে হতো আমদারিকারকদের। আবহাওয়া বিবেচনা করে, বাংলাদেশ ‘৬০/৭০’ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম মনির হোসেন পাঠান জানান, সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে বিটুমিনের মূল ব্যবহারকারী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তারা ব্যবহারের আগে আমদানি করা বিটুমিন নিজস্ব গবেষণাগার এবং বুয়েট ও সংশ্লিষ্ট অন্য গবেষণাগারে পরীক্ষা করে থাকে।
তিনি বলেন, ‘যদি ওই বিটুমিন নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে না পারে, তবে আমরা সেটি বাতিল করে দিই। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবেদনে ওই ধরনের ইস্যু থাকে না।’
এ ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা নিজেরাই বিটুমিনে ভেজাল মেশায় বলে জানান তিনি।
মনির হোসেন পাঠানের মতে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিনের গুণগত মান যে বেশ ভালো, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু, তাদের উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
ফলে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ, সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য সংস্থাকে আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয়।
বর্তমানে সড়ক ও মহাসড়ক তৈরিতে বছরে পাঁচ লাখ টন বিটুমিনের চাহিদা রয়েছে এবং এ চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়।
সম্প্রতি, বসুন্ধরা গ্রুপ প্রায় ১৪৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে দেশের প্রথম ডেডিকেটেড বিটুমিন প্ল্যান্ট স্থাপন করে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখানে বাণিজ্যিকভাবে বিটুমিন উৎপাদন শুরু হয়। বছরে ৯ লাখ টন বিটুমিন উৎপাদন করতে সক্ষম এ প্ল্যান্ট।
কেরাণীগঞ্জের পানগাঁওয়ের ৬৫ একর জায়গাজুড়ে তৈরি এ প্ল্যান্ট প্রাথমিকভাবে প্রায় ২ দশমিক ৭৫ লাখ টন বিটুমিন উৎপাদন করতে পারছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরাক ও শ্রীলংকার মতো দেশ থেকে ৪০টিরও বেশি কোম্পানি বিটুমিন আমদানি করে থাকে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৪২টি কোম্পানি ১৯ হাজার ৬৬১ টন বিটুমিন আমদানি করে, যার প্রায় ৮০ শতাংশই সংযুক্ত আরব আমিরাতের। যদিও, দেশটিতে কোনো বিটুমিন প্ল্যান্ট নেই।
এসব বিটুমিন আমদানিতে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা ৩৪৬টি চালানের মাধ্যমে এসেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩ দশমিক ৮ লাখ টন বিটুমিন আমদানি করে।
বিটুমিন আমদানিকারক এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন বলেন, বাধ্যতামূলক পরীক্ষার মানে হচ্ছে, চালান খালাসের জন্য আরও বেশি সময় লাগবে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না কাস্টমসে মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এজেন্সিগুলো ব্যবহারের আগে এগুলো আবারও পরীক্ষা করবে। আমদানিকারকদের জন্য বিষয়টি একটি ঝামেলা হয়ে দাঁড়াবে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.