অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকাবাসি
রামু-রশিদ নগরে নৌকার প্রভাব খাটিয়ে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ
কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারের রামুর রশিদ নগর থেকে ইউনিয়নের গতবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিল ৪নং ওয়ার্ড়ের কাহাতিয়া পাড়ার মঞ্জুর মোর্শেদ এর ছেলে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ। সেই নির্বাচনে ৪শ ভোটের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল। তবে সে ভোট না পেলেও বা চেয়ারম্যান না হলেও সেই নৌকা প্রতীকের প্রভাব খাঠিয়ে স্থানীয়দের করছে নাজেহাল। জমি সংক্রান্ত্র এমন কোন বিষয় নেই যা তার হাত দিয়ে যাবে না । সে নিজেকে জমি সংক্রান্ত পরামর্শক দাবি করে নিজের এলাকায় সাইনবোর্ড় দিয়েছে । যেখানে পরামর্শ নিতে দিতে হবে ৬শ টাকা।

এদিকে একই এলাকায় পূর্ব শত্রæতার জের ধরে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ এর হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে মা-মেয়ে-ছেলেসহ তিনজন। রশিদনগর ইউনিয়নের উত্তর কাহাতিয়া পাড়া এলাকায় তাসলিমা নুর শিউলি নামে এক নারীর উপর এলোপাতাড়ি হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলায় মা, মেয়ে, ছেলে শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়। এনিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার রামু থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত রামুতে একটি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার নাম্বার ১৯০/২৩ হামলায় মায়ের হাতের কব্জির হাড় ভেঙ্গেছে, দাহ্য পদার্থে ঝলসে গেছে মেয়ের হাত। হামলা থেকে রক্ষা পেতে জাতীয় জরুরী নিরাপত্তা সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে সাড়া পেলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় তারা হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গতমাসের ২৬ আগস্ট বিকেলে রামুর রশিদনগর ধলিরছড়া উত্তর কাহাতিয়াপাড়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ২০১৬ সালে সংগঠিত নজির আহমদ হত্যা মামলার ১০নাম্বার আসামী বলে জানা যায়। যার মামলা নাম্বার ১৬২/১৬।
এদিকে গটে যাওয়া ঘটনার আহতরা হলেন, রামুর রশিদনগর ধলিরছড়ার উত্তর কাহাতিয়াপাড়ার মাহমুদুল হকের স্ত্রী তাসলিমা নুর শিউলী (৩৪), তার মেয়ে ফাতেমা মাহমুদ (১৭) ও ছেলে আবদুল্লাহ (১১)।
হামলাকারি প্রধান অভিযুক্ত সদ্যগত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় জখমের পর তিনদিন চেষ্টা করেও থানায় মামলা করাতে পারেননি আহতরা। পরে সোমবার দুপুরে রামু উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে। এদিকে গত ২৮ আগস্ট তসলিমা নুর শিউলি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছিল যার মামলা নাম্বার ৫২৬/২৩ সেখানে
রামুর রশিদনগর ধলিরছড়ার উত্তর কাহাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা ও রশিদ নগর ইউনিয়নের সদ্যগত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোয়াজ্জম মোর্শেদ (৩০), তার ভাই রায়হানুল মোর্শেদ (২৮) ও পিতা মনজুর মোর্শেদ (৫৮) কে আসামী করা হয়।

মামরার বাদী তাসলিমা নুর শিউলী এজাহারে উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী হিসেবে আসামী মনজুর মোর্শেদের সাথে জমি-জমা নিয়ে বাদিনির বাবার পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বাদিনীর পিতা ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ আগস্ট বিকাল ৪টার পর পূর্ব পরিকল্পনায় আসামীরা ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, লাঠি নিয়ে বাদিনীর বাড়ীর সামনে রাস্তার উপর এসে পরিবারের সদস্যদের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ শুরু করে। বাদিনী বাড়ি হতে বের হয়ে গালি দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই অভিযুক্তরা এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলে আঘাতে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল, ডান কাধ ও ডান হাতের কবজির হাড় ভেঙ্গে জখম হন। মাকে (বাদিনীকে) বাঁচাতে এলে ছেলে-মেয়েও প্রহারের শিকার হন। হামলাকারিদের ছুড়ে মারা দাহ্য পদার্থ পড়ে মেয়ে ফাতেমার হাতের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। সারা শরীর থেতলানো ফুলা জখম হয়েছে সবার। পরে শোর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারিরা বীরদর্পে চলে যায়।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, যাবার সময় অভিযুক্তরা হুমকি দিয়েছে হামলার বিষয়ে মামলা করলে খুন করবে। তাদের প্রথমে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করে। সেখানেই সবাই চিকিৎসাধীন এবং ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন।
তবে অভিযুক্ত মোজ্জেম মোর্শেদ জানান, আমাদের সাথে জমি নিয়ে একটি বিরোধ ছিল । তার রায় আদালত থেকে আমাদের পক্ষে আসে । রায় পাওয়ার পর স্থানীয় চৌকিাদারসহকারে জমিতে গেলে তারা আমার উপর হামলা করে আমিও তাদের উপর হামলা করি । তারা যেসব কথা বলছে তার কোন সতত্যা নাই। তারা মিথ্যা বানোয়াট কথা বলছে আমার বিরোদ্ধে। তার একটি কারণ আমি গতবারের ইউনিয়ন নির্বাচন করেছিলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে। আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা করিনি।
জানা গেছে , মোয়াজ্জেম মোর্শেদ একসময়ের শিবির ক্যাডার ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। এদিকে বর্তমানে হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার তালিকাভুক্ত আসামি মোয়াজ্জম মোর্শেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী দাবি। সে এখন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব বিস্তার করে সর্ব সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।
স্থানীয় হামিদ মাষ্টার বলেন, মোয়াজ্জম এলাকায় ভূমিদস্যূতা, নারী নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এলাকার মানুষকে সর্বশান্ত করেছে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের খোঁজ নিতে ছুটে যান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কক্সবাজার-০৩ আসনের সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রার্থী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। এসময় কাবেরী বলেন, হত্যা মামলার আসামী মোয়াজ্জম মোর্শেদ চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রশিবিরের শীর্ষ ক্যাডার ছিল। তখন সে সাধারণ শিক্ষার্থীকে টর্চার সেলে নির্যাতন চালাত। তিনি আরো বলেন, মোয়াজ্জম সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। হত্যামামলা সহ জামাত-শিবিরের অপকর্মগুলো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করতে আওয়ামী রাজনীতির অভিনয় করছে। সে আওয়ামিলীগের কোন পদ-পদবিতে নেই। এলাকার অসংখ্য মানুষ তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাকে জানিয়েছে। সন্ত্রাসী মোয়াজ্জম মোর্শেদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
হামলার শিকার হওয়া নারীর ভাই জুনায়েদ বলেন, মোয়াজ্জম উত্তর কাহাতিয়া পাড়ার নজির আহম্মদ হত্যা মামলার আসামী। সে প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে অত্যাচারে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সন্ত্রাসী মোয়াজ্জম মোর্শেদের গ্রেফতার চাই।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল এ মামলা করা হলে বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলা রামু থানায় রুজু করতে আদেশ দেন।
এদিকে উক্ত মামলা রামু থানায় রুজু করা হলেও আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রামু থানার দায়িত্বরত তদন্ত কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র ধর জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে আমি তদন্ত করছি। যদি মনে হয় আসামীকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন তবে আমরা তাই করবো ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.