অবশেষে পদত্যাগ প্রধান বিচারপতির

ওয়ান নিউজ ডেক্স: অবশেষে পদত্যাগ করলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়ার পর সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশে থাকা অবস্থায় পদত্যাগ করলেন। গত শুক্রবার তিনি সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছার কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা এবং নানা নাটকীয় ঘটনার পর গত ৩ অক্টোবর থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। এরপর ১৩ অক্টোবর দেশ ত্যাগ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতির অসুস্থতা, ছুটি এবং দেশ ত্যাগ তখন তুমুল আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। বিএনপি সমর্থক আইনজীবী নেতারা অভিযোগ করেন প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন, তাকে জোর করে ছুটি দিয়ে বিদেশে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ দিকে গতকাল তার পদত্যাগের খবর প্রকাশের পর বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় তাকে পদত্যাগও করানো হয়েছে জোর করে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য জোর করে পদত্যাগের অভিযোগকে অবাস্তব আখ্যায়িত করেছেন। আর অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটি নিয়ে পরে প্রধান বিচারপতি সুস্থ দাবি করায়ও তিনি হতভম্ব হয়েছেন বলে জানান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ৩ অক্টোবর সাংবাদিকদের জানান, অসুস্থতার কারণে প্রধান বিচারপতি ১ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসের ছুটিতে গেছেন। ১৩ অক্টোবর দেশ ত্যাগের সময় প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, আমি অসুস্থ না। আমি আবার ফিরে আসব। অন্য দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বারবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতির পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ সুদূরপরাহত।

গত ৩ জুলাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। এ রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়। ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ৭৯৯ পৃষ্ঠার এ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের সংসদ, গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনীতি, দলীয়করণ, মানবাধিকার, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তীব্র সমালোচনা করেন। এই সমালোচনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারা দেশে সাড়া পড়ে যায়। তোলপাড় সৃষ্টি হয় সরকারের মধ্যে।

সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতা তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেন। এরই মধ্যে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। দেশবাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় প্রধান বিচারপতি, বিচার বিভাগ এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের ওপর। অবশেষে লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের তিন মাসের মাথায় নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে পদত্যাগ করলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের নজির নেই। গত শুক্রবার গভীর রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রধান বিচারপতির পরিবারের পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের খবর আসতে থাকে। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছোট ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা গভীর রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান বিচারপতি তার পরিবারকে জানিয়েছেন, তিনি শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুর থেকে কানাডা যাচ্ছেন। তার আগে তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেছেন।
বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব গণমাধ্যমকে গতকাল জানান, প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দেন পদত্যাগপত্র। বঙ্গভবনে পৌঁছার পর তা গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন সুরেন্দ্র কুমার সুনহা। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সংবাদমাধ্যমকে জানান, সংবিধান অনুযায়ী নতুন কোনো বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

ষোড়শ সংশোধনী রায়-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ
বর্তমান সরকার সংসদে পাস করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় এবং রায়ে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন বিষয়ে তীর্যক মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে সরকার। এক কথায় সরকারের তোপের মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও প্রধান বিচারপতির তীব্র সমালোচনা করা হয়। সরকারের ভেতরে বাইরে চলতে থাকে নানা তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী দেখা করেন রাষ্ট্রপতির সাথে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য।

আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিকে বঙ্গভবনে ডেকে নেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তুলে ধরা হয় ১১ দফা অভিযোগ, যা প্রকাশ করা হয় সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে। শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থ এবং তিনি ছুটি নিয়েছেন। এরপর দেশ ত্যাগের পর বিদেশে বসেই পদত্যাগের মাধ্যমে আপাতত অবসান হলো তোলপাড় সৃষ্টি করা এ অধ্যায়ের।

গত ১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ১২ আগস্ট প্রধান বিচারপতির সাথে তার বাসভবনে দেখা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১৩ আগস্ট রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। ১৬ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রায় নিয়ে আলোচনা করেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। ২২ আগস্ট প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে সময় বেঁধে দেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। অন্যথায় তাকে অপসারণে আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়।

রায় এবং প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকারের তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া বিষয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রধান বিচারপতির কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তিনি ধৈর্যধারণের কথা জানান। ২৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে শেষ অফিস করেন বিচারপতি। ১৩ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং পর্যবেক্ষণ বাতিলের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতির তীব্র সমালোচনা করা হয় সংসদে।

১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যাকে আইন অঙ্গনে বিরল ঘটনা বলে অভিহিত করেন অনেকে। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ তুলে ধরেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

বঙ্গভবন থেকে ফিরে পরদিন ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি ইমান আলী নিজেরা বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তারা প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাড়িতে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বললে প্রধান বিচারপতি ‘দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনের’ ওই অভিযোগগুলোর ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ দিতে পারেননি বলে সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এরপর আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এই অবস্থায় অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভবপর হবে না।

৩ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ। তাই তিনি ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে গেছেন। ‘রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন তিনি ক্যান্সারের রোগী, আরো অন্যান্য রোগে তিনি আক্রান্ত। ফলে তার বিশ্রাম দরকার।’

১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশত্যাগের আগে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অসুস্থ না। আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসব। আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগের স্বার্থে, বিচার বিভাগটা যাতে কলুষিত না হয়, এ কারণেই আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি।’
গত শুক্রবার ছুটির মেয়াদ শেষে তার দেশে ফেরা এবং প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে আসা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। অবশেষে শুক্রবার গভীর রাতে খবর এলো পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি।

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তার পদত্যাগের খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গতকাল শনিবার এক আলোচনা সভায় বলেন, আজকের দিনটি বিচার বিভাগ ও আদালতের স্বাধীনতার জন্য কলঙ্কের দিন। তাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। বিচার বিভাগের যে সামান্য স্বাধীনতা ছিল এই সরকার তাও নস্যাৎ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের বিপক্ষে গেছে বলেই এ ঘটনা ঘটল। তারা সমন্বিতভাবে সিনহাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করল।

কী ছিল ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে বর্তমান সরকার সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী পাস করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সে সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। এ সম্পর্কিত রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দলীয় আনুগত্য আর অর্থ নয় বরং মেধাকেই প্রাধান্য দিতে হবে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে এবং প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে।

‘আমাদের লোক’ এই জঘন্য নীতি থেকে মুক্তি পেতে হবে। এ ছাড়া ‘আমি একাই’ সব কিছু করেছি ‘আমিত্ব’র এই আত্মঘাতী পথ থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা একটি রোগে আক্রান্ত হয়েছি। এ রোগের নাম ‘অদূরদর্শী রাজনীতিকরণ’। জঘন্য এ রোগের কারণে নীতিনির্ধারকেরা সব কিছু ব্যক্তিকরণ করে ফেলেছেন। তারা তাদের ুদ্র এবং সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে একটি ভুয়া ও ‘মেকি গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের অবশ্যই এই নোংরা ‘আমাদের লোক’ মতবাদ পরিহার করতে হবে।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আমাদের দেশে রাজনীতি এখন আর মুক্ত নয়। এটা এখন অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনীতির চালকের আসনে রয়েছে অর্থ। আর এ অর্থই নির্ধারণ করছে রাজনীতির কর্মধারা ও গন্তব্য। এখন মেধা নয় ক্ষমতাই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এখন কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে গুটিকয়েক লোকের হাতে। আর ক্ষমতা সংহত করার এই আত্মঘাতী প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ক্ষমতার লোভ প্লেগের মতো। একবার এ রোগ পেয়ে বসলে সব গ্রাস করতে চেষ্টা করে।

বলার অপেক্ষা রাখে না এটা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের আদৌ কোনো লক্ষ্য বা দর্শন ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন, কোনো ক্ষমতাবান দৈত্য তৈরির জন্য নয়। তিনি লিখেছেন গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচন অপরিহার্য। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ও পক্ষপাত ছাড়া নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য সংসদ গঠিত হতে পারে না। জনগণ নির্বাচন কমিশন ও সংসদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

রায়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টে ষোড়শ সংশোধনী রায় বাতিল হওয়ার পর এ বিষয়ে সংসদে যে ধরনের সমালোচনা হয়েছে এবং যেসব অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এটা প্রমাণ করে যে, আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র অপরিপক্ব।

অকার্যকর আর অপরিপক্ব সংসদ, কেনাবেচার সংস্কৃতি প্রভৃতি কারণে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত নয়। এতে বিচার বিভাগ অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণের শিকার হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্য পদ চলে যায়। এ কারণে সংসদ সদস্যরা দলের নির্দেশনা বা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। দলের হাইকমান্ডের কাছে তারা জিম্মি। এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকার পরিণতি হবে বিচারপতিদেরও দলের হাইকমান্ডের করুণায় পরিণত করা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশে বিদ্যমান অবস্থায় সংসদের হাতে এ ক্ষমতা দেয়া হবে চরম আত্মঘাতী পদক্ষেপ।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.